মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০১১

ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্টের জরিপ

পার্বত্য অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে ২ প্রাণী, বিলুপ্তির পথে ৯

এক সময় বন্যপ্রানীর নিরাপদ আবাসস্থল তিন পার্বত্য জেলার সবুজ পাহাড় হলেও বর্তমানে মানুষের অবাধ বিচরন ও বন ধ্বংস করার ফলে পাহাড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রানী আর বিষয়টি উঠে এসেছে ওয়ার্ল্ড লাইফ ট্রাষ্ট অফ বাংলাদেশ (ডাব্লিউ টি বি) এর জরিপে।

বন ও বন্যপ্রানী নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির সূত্র জানান, গত বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি বন ও বন্যপ্রানী নিয়ে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় তাদের জরিপ কাজ শুরু করা হয়। তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশাপাশি অন্য বনগুলোতে সংস্থাটির ১২ জন স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন প্রানীর সন্ধানে চষে বেড়ায়। স্থানীয় বন বিভাগের ম্যাপ এর উপর ভিত্তি করে তারা প্রাথমিক জরিপ শেষ করে। পাহাড়ে বিভিন্ন বন্য প্রানীর পায়ের ছাপ দেখে সনাক্ত করা হয় তাদের উপস্থিতি।

এ জরিপে বেরিয়ে আসে তিন পার্বত্য জেলা থেকে গন্ডার, বন গরু হারিয়ে গেছে। অন্যদিকে বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে রাম ছাগল, চিতা বাঘ, লাম চিতা বাঘ, বন গয়াল, বার্মিজ অজগর এবং রেটিকুলেটেড অজগর, সাম্বা হরিন, রাজ ধনেশ, উল্লুক।

আগামী পাঁচ বছর পর এ ৯টি প্রানী হারিয়ে যাবার তালিকায় যোগ হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। সংস্থাটির সূত্র আরো জানান, রাঙ্গামাটি জেলার কাচালং রিজার্ভ ফরেষ্ট এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলার সাঙ্গু ও লামা উপজেলার মাতামুহুরি রিজার্ভ ফরেষ্ট, এই দুই রিজার্ভ ফরেষ্টের উপর ভিত্তি করে আরো দুই মাস তাদের জরিপ চালানো হবে। পার্বত্য জেলার বন ও বনের প্রানীকুল রক্ষায় জরিপের চূড়ান্ত রিপোর্ট এর প্রস্তাবনা সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরা হবে।

এই ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড লাইফ ট্রাষ্ট বাংলাদেশ এর এসেস্ট রিচার্জ কো-অর্ডিনেটর সুপ্রিয় চাকমা বলেন, পাহাড়ের বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় দেশের রাজনৈতিক সচেতনতার পাশাপাশি স্থানীয় হেডম্যান ও কারবারিদের সচেতন হতে হবে।

বন্য প্রানী হারিয়ে যাবার পেছনে প্রধান কারন হিসাবে জরিপকারীরা বন্যপ্রানীর আবাসস্থল ধ্বংস, বনগুলো খন্ড খন্ড হয়ে যাওয়া, বন্যপ্রানী হত্যা, বাণিজ্যিক ভাবে বন আহরন, ব্যাপক ভাবে অপরিকল্পিত জুম চাষাবাদ, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, তামাক চাষাবাদকে চিহ্নিত করেছে।

বান্দরবানের লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, বান্দরবানের বাইশারী, ঈদগড় ও আলিক্ষ্যং মৌজা নিয়ে বন্য প্রানীর অভয়ারন্য গড়ে তোলার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বন রক্ষায় উক্ত অভয়ারন্যে মানুষের বিচরন সম্পূর্ন নিষিদ্ধ করা হবে। অন্যদিকে জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা এলাকায় ইকোপার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করেছে বন বিভাগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক পরিবেশবিদ বলেন, পাহাড়ের বনজ সম্পদ ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তের পাশাপাশি তিন সার্কেলের রাজাদের মাধ্যমে স্থানীয় হেডম্যান ও কারবারিদের সচেতন করতে হবে। উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটিতে ৬ কোটি ৩০ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫৪৩ একর, খাগড়াছড়িতে ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ৮৫৩ এবং বান্দরবানে ৯৯ হাজার ৩৩০ হেক্টর সরকারী ও অশ্রেণীভুক্ত ১ লক্ষ ৯৪ হাজার ২০২ হেক্টর বন কাগজে কলমে থাকলেও সেগুলো এখন হয়ে পড়েছে বৃক্ষ ও বনপ্রানী শূণ্য।

তথ্যসূত্র: http://chtupdate.blogspot.com/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন