শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১১

তামাকের চেয়ে ইক্ষুচাষে ৩ গুণ বেশি লাভ


বান্দরবানের ইক্ষুচাষিদের মুখে সাফল্যের হাসি

ইক্ষু চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন বান্দরবানের কৃষকরা। ইক্ষুর সঙ্গে সাথী ফসলের চাষ করে একদিনে যেমন এলাকার খাদ্যশস্যের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে বেরিয়ে আসার পথও সুগম হচ্ছে। আজ বুধবার বান্দরবান সদরের চড়ুইপাড়ায় উন্নত পদ্ধতিতে ইক্ষু, গুড় উৎপাদন ও সাথী ফসল চাষের কলাকৌশল বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনের সময় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষকরা জানালেন এসব কথা।

তাঁরা জানান, পার্বত্য এলাকার কৃষকরা তামাক চাষের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে কারণ তামাক চাষের জন্যে অগ্রিম টাকা পাওয়া যায়। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতেও কোনো জটিলতায় পড়তে হয়না। অন্যান্য ফসলের চাষ করলে অগ্রিম আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়না এবং বিক্রি করার কাজটা নিজেদেরকেই করতে হয়।

বান্দরবান সদরের চেমী ডলু পাড়ার কৃষক করিমুল্লাহ জানান, এ বছর তিনি ৪০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন। সাথী ফসল হিসেবে করেছেন শিম। প্রতি কানি জমি থেকে আখ ও সাথী ফসল বাবদ তাঁর লাভ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা, আর তামাক চাষ করে প্রতি কানি জমি থেকে তাঁর লাভ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা।

সদর উপজেলার রাজবিলার কৃষক চাইহ্লাপ্রু চৌধুরী জানান, গত বছর চায়না ও ভিয়েতনাম প্রজাতির আখ চাষে ৭ হাজার টাকা খরচ করে তিনি আয় করেছেন প্রায় ৫৬ হাজার টাকা। তামাক কোম্পানী যেরকম চাষের আগেই বীজ, সারসহ অন্যান্য কাজের জন্যে টাকা দেয়, সেরকম সহায়তা পেলে এলাকার কৃষকরা আরো বেশি আখ চাষে উৎসাহিত হবেন বলে আশা করেন তিনি।
সুয়ালক মাঝের পাড়ার কৃষক অংক্যউ মারমা ২০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন গত বছর। সেখান থেকে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি বাবদ তাঁর আয় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোপাল চন্দ্র পাল জানান, বর্তমান সরকার একটি কৃষিবান্ধব সরকার। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যয়বহুল সারগুলোর দাম কমিয়ে আনা হয়েছে। যার ফলে কৃষকরা সুষম পদ্ধতিতে সার ব্যবহার করতে পারছেন। বাংলাদেশের প্রতিজন মানুষ গড়ে বছরে ১৩ কেজি চিনি ও গুড় খায়। সে হিসেবে ১৪ কোটি মানুষের জন্যে প্রতি বছর প্রায় ১৮ লাখ টন চিনি ও গুড়ের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৬ লাখ টন। বাকি ১২ লাখ টন চিনি ও গুড়ের ঘাটতি রয়েছে। সুতরাং আখ চাষ একটি সম্ভাবনাময় সেক্টর।

তিনি আরো জানান, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পাওয়া থোক বরাদ্দের টাকা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু চাষ সমপ্রসারণের জন্যে পাইলট প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয়েছিল। এ বছরের জুন মাসে সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। প্রকল্প শেষে উদ্বৃত অর্থ দিয়ে আরো প্রায় ছয় মাস প্রকল্পের কাজ চালানো সম্ভব। সামান্য কিছু বরাদ্দ পেলে প্রকল্পটি এক বছর চালিয়ে নেয়া যাবে এবং তাঁরা সরকারের সাথে সে বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তাছাড়া প্রকল্পটিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজস্ব খাতে নিয়ে যাবার জন্যেও তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সেটি স্থায়ীভাবে চালু থাকবে।

তিনি উল্লেখ করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের মধ্যে একটি। এখানে ব্যাপকভাবে আখ চাষ করলে প্রস্তুতকৃত চিনি ও গুড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে পাইলট প্রকল্পের পরিচালক বিষ্ণুপদ পোদ্দার, কমলা প্রকল্পের ড. বিমল চন্দ্র সরকার, প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অফিস ইনচার্জ ক্যছেনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আখ চাষীরা উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যসূত্র: http://chtupdate.blogspot.com/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন