সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০১১
শুভ বৈসু সাংগ্রাই বিঝু
শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১১
তামাকের চেয়ে ইক্ষুচাষে ৩ গুণ বেশি লাভ
বান্দরবানের ইক্ষুচাষিদের মুখে সাফল্যের হাসি
ইক্ষু চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন বান্দরবানের কৃষকরা। ইক্ষুর সঙ্গে সাথী ফসলের চাষ করে একদিনে যেমন এলাকার খাদ্যশস্যের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে বেরিয়ে আসার পথও সুগম হচ্ছে। আজ বুধবার বান্দরবান সদরের চড়ুইপাড়ায় উন্নত পদ্ধতিতে ইক্ষু, গুড় উৎপাদন ও সাথী ফসল চাষের কলাকৌশল বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনের সময় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষকরা জানালেন এসব কথা।
তাঁরা জানান, পার্বত্য এলাকার কৃষকরা তামাক চাষের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে কারণ তামাক চাষের জন্যে অগ্রিম টাকা পাওয়া যায়। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতেও কোনো জটিলতায় পড়তে হয়না। অন্যান্য ফসলের চাষ করলে অগ্রিম আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়না এবং বিক্রি করার কাজটা নিজেদেরকেই করতে হয়।
বান্দরবান সদরের চেমী ডলু পাড়ার কৃষক করিমুল্লাহ জানান, এ বছর তিনি ৪০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন। সাথী ফসল হিসেবে করেছেন শিম। প্রতি কানি জমি থেকে আখ ও সাথী ফসল বাবদ তাঁর লাভ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা, আর তামাক চাষ করে প্রতি কানি জমি থেকে তাঁর লাভ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা।
সদর উপজেলার রাজবিলার কৃষক চাইহ্লাপ্রু চৌধুরী জানান, গত বছর চায়না ও ভিয়েতনাম প্রজাতির আখ চাষে ৭ হাজার টাকা খরচ করে তিনি আয় করেছেন প্রায় ৫৬ হাজার টাকা। তামাক কোম্পানী যেরকম চাষের আগেই বীজ, সারসহ অন্যান্য কাজের জন্যে টাকা দেয়, সেরকম সহায়তা পেলে এলাকার কৃষকরা আরো বেশি আখ চাষে উৎসাহিত হবেন বলে আশা করেন তিনি।
সুয়ালক মাঝের পাড়ার কৃষক অংক্যউ মারমা ২০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন গত বছর। সেখান থেকে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি বাবদ তাঁর আয় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোপাল চন্দ্র পাল জানান, বর্তমান সরকার একটি কৃষিবান্ধব সরকার। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্যয়বহুল সারগুলোর দাম কমিয়ে আনা হয়েছে। যার ফলে কৃষকরা সুষম পদ্ধতিতে সার ব্যবহার করতে পারছেন। বাংলাদেশের প্রতিজন মানুষ গড়ে বছরে ১৩ কেজি চিনি ও গুড় খায়। সে হিসেবে ১৪ কোটি মানুষের জন্যে প্রতি বছর প্রায় ১৮ লাখ টন চিনি ও গুড়ের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৬ লাখ টন। বাকি ১২ লাখ টন চিনি ও গুড়ের ঘাটতি রয়েছে। সুতরাং আখ চাষ একটি সম্ভাবনাময় সেক্টর।
তিনি আরো জানান, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পাওয়া থোক বরাদ্দের টাকা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু চাষ সমপ্রসারণের জন্যে পাইলট প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয়েছিল। এ বছরের জুন মাসে সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। প্রকল্প শেষে উদ্বৃত অর্থ দিয়ে আরো প্রায় ছয় মাস প্রকল্পের কাজ চালানো সম্ভব। সামান্য কিছু বরাদ্দ পেলে প্রকল্পটি এক বছর চালিয়ে নেয়া যাবে এবং তাঁরা সরকারের সাথে সে বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তাছাড়া প্রকল্পটিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজস্ব খাতে নিয়ে যাবার জন্যেও তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সেটি স্থায়ীভাবে চালু থাকবে।
তিনি উল্লেখ করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের মধ্যে একটি। এখানে ব্যাপকভাবে আখ চাষ করলে প্রস্তুতকৃত চিনি ও গুড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে পাইলট প্রকল্পের পরিচালক বিষ্ণুপদ পোদ্দার, কমলা প্রকল্পের ড. বিমল চন্দ্র সরকার, প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অফিস ইনচার্জ ক্যছেনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আখ চাষীরা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যসূত্র: http://chtupdate.blogspot.com/
মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০১১
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্টের জরিপ
এক সময় বন্যপ্রানীর নিরাপদ আবাসস্থল তিন পার্বত্য জেলার সবুজ পাহাড় হলেও বর্তমানে মানুষের অবাধ বিচরন ও বন ধ্বংস করার ফলে পাহাড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রানী আর বিষয়টি উঠে এসেছে ওয়ার্ল্ড লাইফ ট্রাষ্ট অফ বাংলাদেশ (ডাব্লিউ টি বি) এর জরিপে।
বন ও বন্যপ্রানী নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির সূত্র জানান, গত বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি বন ও বন্যপ্রানী নিয়ে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় তাদের জরিপ কাজ শুরু করা হয়। তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাশাপাশি অন্য বনগুলোতে সংস্থাটির ১২ জন স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন প্রানীর সন্ধানে চষে বেড়ায়। স্থানীয় বন বিভাগের ম্যাপ এর উপর ভিত্তি করে তারা প্রাথমিক জরিপ শেষ করে। পাহাড়ে বিভিন্ন বন্য প্রানীর পায়ের ছাপ দেখে সনাক্ত করা হয় তাদের উপস্থিতি।
এ জরিপে বেরিয়ে আসে তিন পার্বত্য জেলা থেকে গন্ডার, বন গরু হারিয়ে গেছে। অন্যদিকে বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে রাম ছাগল, চিতা বাঘ, লাম চিতা বাঘ, বন গয়াল, বার্মিজ অজগর এবং রেটিকুলেটেড অজগর, সাম্বা হরিন, রাজ ধনেশ, উল্লুক।
আগামী পাঁচ বছর পর এ ৯টি প্রানী হারিয়ে যাবার তালিকায় যোগ হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। সংস্থাটির সূত্র আরো জানান, রাঙ্গামাটি জেলার কাচালং রিজার্ভ ফরেষ্ট এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলার সাঙ্গু ও লামা উপজেলার মাতামুহুরি রিজার্ভ ফরেষ্ট, এই দুই রিজার্ভ ফরেষ্টের উপর ভিত্তি করে আরো দুই মাস তাদের জরিপ চালানো হবে। পার্বত্য জেলার বন ও বনের প্রানীকুল রক্ষায় জরিপের চূড়ান্ত রিপোর্ট এর প্রস্তাবনা সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরা হবে।
এই ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড লাইফ ট্রাষ্ট বাংলাদেশ এর এসেস্ট রিচার্জ কো-অর্ডিনেটর সুপ্রিয় চাকমা বলেন, পাহাড়ের বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় দেশের রাজনৈতিক সচেতনতার পাশাপাশি স্থানীয় হেডম্যান ও কারবারিদের সচেতন হতে হবে।
বন্য প্রানী হারিয়ে যাবার পেছনে প্রধান কারন হিসাবে জরিপকারীরা বন্যপ্রানীর আবাসস্থল ধ্বংস, বনগুলো খন্ড খন্ড হয়ে যাওয়া, বন্যপ্রানী হত্যা, বাণিজ্যিক ভাবে বন আহরন, ব্যাপক ভাবে অপরিকল্পিত জুম চাষাবাদ, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, তামাক চাষাবাদকে চিহ্নিত করেছে।
বান্দরবানের লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, বান্দরবানের বাইশারী, ঈদগড় ও আলিক্ষ্যং মৌজা নিয়ে বন্য প্রানীর অভয়ারন্য গড়ে তোলার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বন রক্ষায় উক্ত অভয়ারন্যে মানুষের বিচরন সম্পূর্ন নিষিদ্ধ করা হবে। অন্যদিকে জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা এলাকায় ইকোপার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করেছে বন বিভাগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক পরিবেশবিদ বলেন, পাহাড়ের বনজ সম্পদ ও জীব বৈচিত্র রক্ষায় সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তের পাশাপাশি তিন সার্কেলের রাজাদের মাধ্যমে স্থানীয় হেডম্যান ও কারবারিদের সচেতন করতে হবে। উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটিতে ৬ কোটি ৩০ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫৪৩ একর, খাগড়াছড়িতে ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ৮৫৩ এবং বান্দরবানে ৯৯ হাজার ৩৩০ হেক্টর সরকারী ও অশ্রেণীভুক্ত ১ লক্ষ ৯৪ হাজার ২০২ হেক্টর বন কাগজে কলমে থাকলেও সেগুলো এখন হয়ে পড়েছে বৃক্ষ ও বনপ্রানী শূণ্য।
তথ্যসূত্র: http://chtupdate.blogspot.com/
বান্দরবানের পাহাড়ি ঝর্না থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন
৪ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নোটিশ দিয়েছে বেলা
সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০১১
খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব
খাগড়াছড়িতে গত ৫ বছরে প্রাণঘাতী রোগ ম্যালেরিয়ায় মারা গত ৫ বছরে মারা গেছেন ২৫৩ জন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৯৪ হাজার লোক। খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে গত ২৮ মার্চ সোমবার আয়োজিত ম্যালেরিয়া বিষয়ক এক এ্যাডভোকেসী সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় আরো জানানো হয়, তিন পার্বত্য জেলা ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। গ্লোবাল ফান্ডের সহযোগিতায় বাংলাদেশের ১৩টি ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সচেতনতা সৃষ্টি, সঠিক রোগ নিরূপণ আর যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে ২০১৫ সালের মধ্যে আক্রান্ত ও মারা যাবার হার অর্ধেকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। সভায় উপস্থাপিত তথ্যমতে, ম্যালেরিয়ায় খাগড়াছড়ি জেলায় ২০১০ সালে ১৩জন, ২০০৯ সালে ১২ জন, ২০০৮ সালে ৫৫ জন, ২০০৭ সালে ৯৯ জন এবং ২০০৬ সালে ৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ বছর বর্ষা মৌসুমে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়ে জনগণকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়। সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভায় চিকিৎসক, সরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সেবাদানকারী বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যসূত্র: http://chtupdate.blogspot.com/
রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১১
রাঙামাটিতে পার্বত্য ভাষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মাতৃভাষা শিক্ষা ও মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণসহ নিজ নিজ বর্ণমালায় প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণের দাবি জানিয়ে রাঙামাটিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম পার্বত্য ভাষা সম্মেলন সমাপ্ত হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি বলেছেন, আদিবাসীদের শিক্ষার মাধ্যম কী হবে, তাদের পাঠ্যসূচিতে কী কী বিষয় সংযুক্ত হবে, সবকিছুই নির্ধারণ করবে আদিবাসী জনগণ। সরকারের পরিকল্পনাতেও তা-ই রয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট-এ আদিবাসীদের ভাষা সংরক্ষণ, বিকাশ, প্রচলন ও গবেষণা করার জন্য একটি স্বতন্ত্র অনুষদ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে আদিবাসী বিষয়ক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করার প্রয়াস সরকারের রয়েছে। সেভ দ্যা চিলড্রেন, জাবারাং, গ্রাউস ও সাস সহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সম্মেলনে পার্বত্য অঞ্চলের ভাষা বিশেষজ্ঞ, গবেষক, উন্নয়নকর্মী, সংবাদকর্মী, শিক্ষক, প্রথাগত নেতৃত্ব, ভাষা কমিটিসমূহসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। বিশিষ্ট গবেষক সুগত চাকমা উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সেভ দ্যা চিলড্রেন প্রতিনিধি ম. হাবিবুর রহমান, দৈনিক প্রথম আলোর রাঙামাটি প্রতিনিধি হরি কিশোর চাকমা, এসআইএল-এর প্রতিনিধি ফিওনা মর্গান প্রমুখ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ানের সভাপতিত্বে আয়োজিত বিকেলের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য স্নেহ কুমার চাকমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের উপপরিচালক এ কিউ এম সাইফুল আজম, সহকারী পরিচালক মো. ইমামুল হক ও ভাষা গবেষক ক্য শৈ প্রু খোকা।
প্রধান অতিথির ভাষণে স্নেহ কুমার চাকমা বলেন, বর্তমান সরকার আদিবাসীদের উন্নয়নে নানামুখি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার প্রক্রিয়াও এই কর্মসূচির অন্যতম অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েও সরকারের এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে তিনি মতব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথি এ কিউ এম সাইফুল আজম বলেন, সরকার আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের অধিকার বাস্তবায়নে বিশেষ যত্নশীল। তাই জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-সহ বিভিন্ন সরকারি দলিলে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের অধিকারকে যথাযথভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠির সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করেন।
আয়োজক সংস্থাসমূহের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য দেন সাস-এর নির্বাহী পরিচালক ললিত সি চাকমা, সম্মেলনের উদ্দেশ্য বিবরণ করেন সেভ দ্যা চিলড্রেনের মেহেরুন নাহার স্বপ্না এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাবারাং-এর নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা।
দিনব্যাপী আয়োজিত সম্মেলনে নিম্নোক্ত সুপারিশনামা ঘোষণা আকারে গ্রহণ করা হয়-
১। মাতৃভাষা শিক্ষা ও মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা;
২। যেসব জাতিগোষ্ঠির নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে, তাদেরকে নিজ নিজ বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক রচনায় সহায়তা করা;
৩। যেসব জাতিগোষ্ঠির নিজস্ব বর্ণমালা নেই, তাদেরকে তাদের ভাষার বানানরীতির সাথে উপযোগি হরফ নির্বাচনের সুযোগ প্রদান করা;
৪। হরফ নির্বাচন, বানানরীতি নির্ধারণসহ ভাষা উন্নয়নের যাবতীয় সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠির সম্মতি ও সিদ্ধান্তক্রমে চুড়ান্ত করা;
৫। পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্তব্যের অংশ হিসেবেই মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রচলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা;
৬। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর নেতৃত্বে শিক্ষা বিষয়ক সকল কার্যক্রম সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা;
৭। স্থানীয়তার ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি উচ্চমানসম্পন্ন কমিটি গঠণ করা;
৮। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সাথে যথাযথ সমন্বয় সাধন করা;
৯। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন ও অঙ্গীকারগুলো (ইউএনসিআরসি, পিআরএসপি, পিইডিপি-২, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ ইত্যাদি) যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা;
১০। ভাষা কমিটি বা সংশ্লিষ্ট ভাষার জনগোষ্ঠিকে ভাষা ও সংশ্লিষ্ট ভাষায় শিক্ষা প্রচলন সংক্রান্ত কার্যক্রমের সকল পর্যায়ে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা;
১১। ভাষা উন্নয়নের অংশ হিসেবে প্রতিটি ভাষায় অভিধান প্রণয়ন ও প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহন করা;
১২। নিজ নিজ ভাষায় পঠন-পাঠনের বিষয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
১৩। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজ নিজ মাতৃভাষায় লেখা ও পড়ার দক্ষতাকে অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা;
১৪। মাতৃভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা;
১৫। মাতৃভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের সকল পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা;
১৬। আদিবাসী ভাষানীতি প্রণয়ন করা;
১৭। সংবিধানে বাংলা ভাষার পাশাপাশি আদিবাসীদের ভাষাসমূহের স্বীকৃতি প্রদান করা;
১৮। আদিবাসী ভাষা ও শিক্ষা বিষয়ক একটি স্বতন্ত্র কমিশন বা কমিটি গঠন করা;
১৯। প্রতিনিয়ত গবেষণার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করা;
২০। আদিবাসী বিষয়ক স্বতন্ত্র একটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা;
২১। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ভিতরে আদিবাসী ভাষা বিষয়ক একটি সেল গঠন করা;
২২। ভাষা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটউটগুলোর সাথে সংযোগ তৈরি করা;
২৩। জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আদিবাসীদের জন্য শিথিল করা;
২৪। ভাষা প্রমিতকরণ, হরফ উন্নয়ন ও নিজস্ব ব্যাকরণ রীতি প্রণয়ন করা;
২৫। ভাষাকে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করা; যেমন- ডিজিটাল অভিধান প্রণয়ন ইত্যাদি;
২৬। পাঠ্যসূচি প্রণয়নে মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির ব্যবহার করা।
তথ্যসূত্র: দৈনিক অরণ্যবার্তা